ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে একেবারে শেষ মুহূর্তে বোঝাপড়ার জন্য জোরালো উদ্যোগ চলছে। অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা দিলে আরো এক মাস আলোচনা চলতে পারে। তা না হলে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট অনিবার্য হয়ে পড়বে। এই নিয়ে চাপের মধ্যে আছে ইইউ ও ব্রিটেন।
ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনার সময় প্রায় শেষ। অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের মধ্যে মত পার্থক্য এখনো দূর হচ্ছে না। আইনি বিরোধ মেটানোর কাঠামো, মাছ ধরার অধিকার ও দুই পক্ষের কোম্পানিগুলোর জন্য প্রতিযোগিতার ন্যায্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে কোনো সমাধানসূত্র দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ইইউ ব্রিটেনের অবস্থান বদলানোর ডাক দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ব্রাসেলসে ইইউ’র শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা পুরো প্রক্রিয়ার অগ্রগতি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান। অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও ১৫ অক্টোবরের মধ্যে চুক্তির আদৌ কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানতে চান।
মঙ্গলবার ইইউ’র বর্তমান সভাপতি দেশ জার্মানির ইইউ সংক্রান্ত মন্ত্রী মিশায়েল রোট বলেন, চুক্তির জন্য ইইউ যথেষ্ট পরিশ্রম করছে। তবে প্রয়োজনে চুক্তি ছাড়াই ২০২১ সাল থেকে ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য চলবে। রোট বাকি ২৬টি দেশের মন্ত্রীদের বলেন, বিরোধের মূল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এখনো কোনো অগ্রগতি হয় নি।
তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত চুক্তি সম্ভব না হলে পরিস্থিতি সামলাতে ইইউ আরো পদক্ষেপ নেবে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলও মঙ্গলবার সবার স্বার্থে চুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তুতির কথাও বলেন তিনি।
ব্রিটেনের জলসীমায় মাছ ধরার অধিকারের বিষয়টি কেন্দ্র করে ইইউ’র মধ্যেও জোরালো তৎপরতা চলছে। এক্ষেত্রে ব্রিটেনকে কিছুটা ছাড় দেয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে ফ্রান্স।
উল্লেখ্য, ফ্রান্সের জেলেদের একটি বড় অংশ এতদিন ধরে ব্রিটেনের জলসীমায় মাছ ধরে এসেছে। মাছ ধরার অধিকারের বিষয়টি গোটা চুক্তির ভবিষ্যৎ বিপন্ন করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফ্রান্স কড়া অবস্থান নিলেও ১ জানুয়ারি থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্যের পথে বাধা এড়াতে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনার পক্ষে প্রশ্ন করছে ইইউ’র বেশ কিছু দেশ। কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, অগ্রগতির যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলে প্রয়োজনে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আলোচনা চলতে পারে। এরপর দুই পক্ষকেই ঠিক সময়ে সেই চুক্তির আইনি অনুমোদন করতে হবে যাতে ১ জানুয়ারি থেকে চুক্তিটি কার্যকর হতে পারে।
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুক্তি সম্পর্কে আশা প্রকাশ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন। তবে সঠিক শর্তে বোঝাপড়া হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুখপাত্র বলেন, জনসন বুধবার ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন। অন্যদিকে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি হিসেবে ব্রিটেন জরুরি ভিত্তিতে ওষুধপত্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য মজুত করছে। সেই লক্ষ্যে সরকার বেশ কয়েকটি ফেরি কোম্পানির পরিষেবা ভাড়া করেছে৷
ইউরোপীয় সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল মেরকেলের সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, দুই পক্ষের স্বার্থে চুক্তি জরুরি হলেও তার জন্য যে কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত নয় ইইউ। তাই আগামী কয়েক দিন এই প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র- ডয়চে ভেলে
Leave a Reply